ঘড়ি (শেষ পর্ব)
©MIKParadox
। ৫।
। ৫।
-কিরে কোন দিকে খেয়াল তোর? বান্ধবীর ডাকে হতচকিয়ে গেল ফারিহা।
-কতক্ষণ ধরে তোকে যেন কেমন মনমরা হয়ে বসে আছিস।চল আজকে সবাই ইসরাত ম্যামের
কাছে যাব ফিজিওলজি বুঝতে হবে,চল।
-চল।
হোস্টেলের রাস্তা শেষ করে ক্যাম্পাসের রাস্তায় আসা মাত্রই পিছন থেকে কে যেন
ডাক দিল “এই যে চন্দ্রমুখী?” বান্ধবীরা সবাই এগিয়ে গেলেও থমকে দাঁড়াল ফারিহা।
-কিরে থামলি কেন?
-কে যেন ডাক দিল।পিছনে ফিরে দেখল সম্রাট দাঁড়ানো।বিস্মিত একটা লুক দিয়ে
আবার হাঁটা শুরু করল।
-কিরে!!!!! কে? আলতো করে পেটে একটা গুঁতো দিল একজন। আবার চন্দ্রমুখী!!!!!!
-কিছু না সামনে তাকা আর হাট।
-কেন ইভটিজার নাকি দিবো চিৎকার?
- না না। পিছন থেকে ডাক ভেসে আসছে “এই যে চন্দ্রমুখী?”
- আচ্ছা তোরা যা আমি আসছি।
- ও ভিতরে ভিতরে টেম্পু চালাও আমারা কইলে হরতাল????আমারাও থাকি।
-না। আমি পড়ে সব বলব।এখন তোরা যা। ঠিক আছে।হাসতে হাসতে বাকিরা চলে গেল।
পিছিয়ে যাচ্ছে ফারিহা।মনে মনে ভাবছে কাজটা কি ঠিক হচ্ছে? সাতপাঁচ ভাবে গেল
সামনে।
-আমি চন্দ্রমুখী না।আর আমাকে ডাকছেন কেন? আপনিতো আমাকে চেনেনই না!!!! ঐ দিন
কথা শেষ না করে হঠাৎ চলে গেলেন কেন?বলেও যেতে পাড়তেন?
-আসলে আমার শার্ট লন্ড্রিতে দিয়েছিলাম। ওরা আবার বিকেলে দোকান বন্ধ করে
দিবে।তাই হঠাৎ মনে হওয়ায় আর বলে যাবার সময় পাইনি। তাছাড়া চন্দ্রমুখী না হলে তুমি
পিছনে ফিরে দেখলে কেন?
হাসা শুরু করে দিল সম্রাট। সম্রাটের শিশুসুলভ আচরণ আর হাসিতে ফারিহাও হেসে
ফেলল।এই হাসিতে ঐদিন একা ফেলে চলে যাওয়ার রাগটা কেমন যেন বরফের মত মুহূর্তেই পানি
হয়ে গেল।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করব ভাইয়া?যদি কিছু মনে না করেন।
-কর।তবে এখন পড়ালেখার বিষয় করবে না।এখন বাতাস খেতে আসছি।
-আপনি ডান হাতে ঘড়ি পরেন কেন?
-আমার ইচ্ছা একটু এক্সসেপশোনাল হওয়া।দেখ পুরো ক্যাম্পাসে আমি একমাত্র ছেলে
যার ডান হাতে ঘড়ি।
-কি বলছেন?এত কনফিডেন্ট আপনি?
-আমি সার্ভে করেই বলছি।আমি এই ৫ বছরে আমাদের ক্যাম্পাসে কাউকে দেখি নাই এই
রকম।আমিই একটু অন্যরকম। তুমি ইচ্ছে হলে করে দেখতে পার।
-না আমার দরকার নাই। কথা বলতে বলতে বলতে কলেজের সামনের লেকের ধারে চলে আসলো
দুজনে।
-এই লেকে একটা মজার জিনিস আছে যা আমার খুব ভালো লাগে।কি বলেন দেখি?আপনি তো
৫ বছর ধরে আছেন এই ক্যাম্পাসে।আবার আপনি এক্সসেপশোনাল। বলেন তো এই লেকের
এক্সসেপশোনাল কি?
-কই এই ভাবে তো কখনো ভাবি নাই। কি?
-ঐ যে লেকের একটু ঐ দিকে একটা গোলাপি শাপলা ফুল ফোটে। খুব সুন্দর লাগে।
বছরে মাঝে মাঝে ফুটে। ঐ ফুলের ওপর মাঝে মাঝে পোকা বসে থাকে। ড্রাইগন ফ্লাই। আমার
ফুলটা খুব ভালো লাগে।
-একী? মানুষের ভালো লাগে গোলাপ,রজনীগন্ধা। তোমার লাগে শাপলা?
-কারণ শাপলাকে কেউ ভালবাসে না। অন্যান্য ফুলও ভালো লাগে।আমি ক্যাম্পাসে এসে
এই শাপলার প্রেমে পড়ে গেছি।কিন্তু একবারও একটা ধরে দেখতে পারি নাই।
-ধরে দেখতে চাও নাকি?
-কেন আপনি কি নৌকা ভাড়া করে আনবেন নাকি? আর আমি পানিতে নামতে পারব না। আর
কে যেন শাপলাটা নিয়ে যায়,নাকি লেকে পড়ে যায় আমিতো আর জানি না। ভাগ্যে থাকলে একদিন
ধরবই ধরব।
-নেপোলিয়ন একবার এক লোকের কাছে হাত দেখাতে গিয়ে ছিল ছোটবেলায়।তার হাত দেখে
বলা হয়েছিল হাতে নাকি ভাগ্য রেখা নাই।তখন নেপোলিয়ন বাসায় গিয়ে ছুরি দিয়ে হাতে একটা
গভীর ক্ষত বানায়।একমাস পর ক্ষত শুকানোর পর আবার যায় ঐ লোকের কাছে।তারপর জিজ্ঞেস
করে যে এবার হাতে ভাগ্য রেখা আছে কিনা। লোকটা তখন বলে যে ছেলে হাতের ভাগ্য রেখা
বানাতে পারে তার জন্য ভাগ্য রেখার দরকার নাই।সে এমনি ভাগ্যবান। গল্পটা অবশ্য
শুনেছি। ভাগ্য মাঝে মধ্যে বানাতে হয়।
-হইসে ভাইয়া আমাকে আর জ্ঞান দিয়েন না। এমনি সামনে ফিজিওলজি পরিক্ষা। ওহ
আপনিতো আবার বলেছেন লেখাপড়ার কথা বলতে না,সরি।
-ইসারত ম্যামের কাছে যাও।ভাল ম্যাম। যে গুলো না বুঝো বুঝিয়ে দিবে।
-আপনি জানি একটু কেমন যান্ত্রিক যান্ত্রিক।আবার তার উল্টোও। খুব মজা করতে
পারেন।
-আমি মুদ্রার মত।একই মুদ্রার দুই পিঠ যেমন থাকে ঐরকম।টস করলে যখন যেই পিঠ ওঠে তখন ঐ রকম থাকি। হেসে ফেলল সম্রাট।
-আচ্ছা তাহলে আসি ভাইয়া। ওরা আবার আমার আগেই সব বুঝে চলে আসতে পারে। ওরা
ম্যামের কাছেই গেছে।
বিদায় নিয়ে চলে আসলো ফারিহা। চলে আসাতে কেমন যেন একটু খারাপ লাগছে। আরেকটু
গল্প করতে পারলে ভালো লাগত।হাঁটতে হাঁটতে পিছনে ফিরে দেখল লেকে দিকে তাকিয়ে আছে
সম্রাট।
। ৬।
-মামা তুমি তাইলে টি- টোয়ানটি খেলতেসো?
-মানে? অবাক হল ফারিহা।
- ফার্স্ট বয়ের সাথে প্রেম করে ফার্স্ট হয়ে যাচ্ছেন তো।
- কি? সম্রাট ভাইয়া ফার্স্ট বয়?
-আকাশ থেকে পরলি মনে হয়। দেখ ঢং করিস না। আমরা সব বুঝি বুজছ? তা কেমনে কি?
-আরে কিছুই না গত পরশু উনার সাথে বিকেলে দেখা হইসে। আর কিছুই না। আর আমিতো
জানি না যে উনি ফার্স্ট বয়। আল্লাহ্ আমি উনারে কত উল্টা পাল্টা বলসি। এখন বাদ দে
পরীক্ষার পড়া পর।
- ফোন নাম্বার আনসস না? দে না একটা কল দে!!!
-নারে নাম্বার তো আনি নাই।আরে ধুর আমি ঐরকম কিছুই চিন্তা করি নাই। কি সব ফাইজলামি শুরু করসস।
- আচ্ছা শোন কালকে আমাদের আবার ইসরাত ম্যাম যাইতে বলসে।
কাল সকালে ওয়ার্ডে গেল ম্যামের সাথে দেখা করতে। কিন্তু দোতালায় দেখা গেল
অনেক ভিড়।সবাই গেল ঐদিকে। গিয়ে শুনল কোন ছাত্র নাকি লেকে পড়ে মারা গেছে।আর অবাক
ব্যপার হচ্ছে যে, ছেলেটার হাতে নাকি শাপলা ফুল।রিগর মরর্টিসের কারণে এখনো নাকি
হাতে শাপলা ফুল আছে। অজানা এক আতঙ্কে ফারিহার মাথা ঘুরতে লাগলো। সামনে যেতে যেতে
শুনল একজন পরিচ্ছনন্নতা কর্মী ব্যাপারটা দেখেছে সে বলছিলঃ
-দ্যাখলাম এক ভাইজান লেকের কাছে আইসা খালি আউগায় আর পিছায়।আমি কইলাম কি
দরকার। ভাইয়ে কইল হ্যায় নাকি শাপলা ফুলডা নিব।তারপর আমি না করার আগেই হ্যায় লাফ দিল পানিতে।
আমি দেখলাম হ্যায় শাপলা ফুলের কাছাকাছি
গেলগা।এইবার আমি খিয়াল করলাম যে ভাইয়ে পানিতে হাঁসের লাহান ডুবাডুবি করতাসে। আমি
বুইজ্জালাইলাম যে ভাইয়ে সাঁতার পারে না। আল্লাহর কি ফয়সালা আমিও সাঁতার পারি না।
আমি চিতকুর পারলাম। কিন্তু ভাইয়েরে দেখলাম কিছুক্ষণ পানির উপরে ভাসল।পরে সবাই আইতে
আইতে ............
শীতের সকাল। হুহু করে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। ঝাপসা চোখে সামনের দিকে এগুলো
ফারিহা। সাদা কাপড়ে একটা শরীর ঢাকা। একটা ঘড়ি পড়া হাত বের হয়ে আছে সাদা চাদরের
ফাঁক দিয়ে।হাতে একটা গোলাপি শাপলা।হাতটা ডান হাত।
“পুরো গল্পটি কাল্পনিক,বাস্তবের সাথে এর কোন মিল নেই।তবে কারো সাথে মিলে গেলে তা
কাকতালীয়।যারা নিজেদের মধ্যে ফারিহা বা সম্রাটের চরিত্র খুঁজে পান,তাদেরকে গল্পটি
উৎসর্গ করলাম”
Comments
Post a Comment