ঘড়ি (দ্বিতীয় পর্ব)

©MIKParadox

 । 

দুপুরে প্রফ পরীক্ষা দিয়ে রুমে আসল ফারিহা।পরীক্ষা বেশ একটা ভাল হয় নাই। স্যার দয়া করলে পাশ মার্ক চলে আসবে। আজকে বিকেল তিনটায় দেখা করতে যাবে সম্রাটের সাথে। গোসল করে খাবার খেয়ে টকটকে লাল দেখে একটা শাড়ি বের করল। চুল গুলো খোঁপা বেধে নিল। চোখে গাঢ় করে কাজল দিল।আচ্ছা এতো সাজগোজ করছি কেন? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করল ফারিহা।
সম্রাট ফাইনাল প্রফ নিয়ে খুবই চিন্তিত। মেডিসিন কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। হঠাৎ মার কথা মনে পড়ে গেল।ফোন দিল মাকে।
-হ্যালো আম্মু?
-আব্বা ভাল আছো।কি কর?
-এই তো আম্মু।পরীক্ষা নিয়া খুব চিন্তায় আছি।পড়তে বসছি।মাথায় কিছু ঢুকতেছে না।
-সমস্যা নাই আব্বা।আমি জায়নামাজে বসে প্রতি ওয়াক্তে দোয়া করি। তা আব্বা নামায পড়  তো রীতিমত?
-জি আম্মু পড়ি তো
- শোন আব্বা। নামায পড়ে সুরা ইয়াসিন পরবা। কবার পড়লে ১০ বার কোরআন খতমের সওয়াব পাবা। আল্লাহ্‌ সব সহজ করে দিব। কয়দিন বাকি পরীক্ষার?
-এই তো আম্মু আর তিন দিন। আব্বু কেমন আছে? বাসার সবাই ভাল?
-আল্লাহ্ রাখসে।তোর আব্বা অপেক্ষায় আছে তুই কবে পাশ করবি।তোর আব্বা তোর জন্য চেম্বার এর নামও ঠিক করসে।নাম শুনবি?
-না থাক বলার দরকার নাই। আগে পাশ করি। তা আম্মু দোয়া রাইখেন।
-অবশ্যই আব্বা।মন দিয়া পড়ালেখা করবা এদিক সেদিক যাইবা না। আল্লাহ্‌ হাফেয
-আল্লাহ্‌ হাফেয
মার সাথে কথা বলে মন টা খারাপ হয়ে গেল। কত আশা নিয়ে তারা অপেক্ষায় আছে। অথচ প্রিপারেশন ভাল না। ঘড়ি দেখল। আজকে ত ফারিহার সাথে দেখা করার কথা।আরে ধুর মেয়েটা আসবে না। তার থেকে বসে বসে পরীক্ষার পড়া পড়ি। কেন যেন মনে হচ্ছে মেয়েটা আসবে। অস্বস্তি লাগতে লাগলো। আচ্ছা মেয়েটা যদি আসলেই চলে আসে তখন কি হবে? আরে রুমে ত জামা কাপড় সব ময়লা হয়ে আছে। ধোয়া হয় নাই। যাক কি আর করার।পড়তেও ইচ্ছে করছে না আবার ফারিহার কথাও মনে বারবার আসছে।যাই ক্যান্টিনে,না আসলে এক কাপ কফি খেয়ে চলে আসব।আবার কে যাবে সন্ধ্যায় চা খেতে। এক কাজ করি কালো জিন্সটা পরি। আধোয়া বুঝা যাবে না। আর নীল সোয়েটারটা পরে নিল স্যান্ডো গেঞ্জির উপরেই।কেউ ত আর ভিতরেরটা দেখছে না। হাসল মনে মনে। খুব সময় নিয়ে চুল আঁচড়াল । আয়না দেখে মনে হল  চুলগুলো ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে। সেভ করা হয় নাই। আসলে এতো পড়া যে সময়ই পাওয়া যায় না। পরীক্ষার তিন দিন যাক পরে দেখা যাবেনে। তিনটা বাজতে আর দশ মিনিট বাকি।ঘড়িটা হাতে পড়ে নিল সম্রাট। দরজায় তালা দিয়ে নিচে নেমে পকেটে হাত দিয়ে দেখল যে মানিব্যাগ রুমেই ফেলে এসেছে।


। 

তাড়াহুড়ো করে ক্যান্টিনে ঢুকল ফারিহা। দেখল ক্যান্টিনে পিচ্ছি গুলো টেবিল পরিষ্কারে ব্যাস্ত। একটা টেবিল থেকে শব্দ আসলো “আপনি পুরো সাত মিনিট আঠারো সেকেন্ড লেট মিস চন্দ্রমুখী!!!!!!!” একটা নীল সোয়েটার গায়ে দেয়া উল্টো ঘুরে থাকা এক ছেলের গলা শুনতে পেল। চুলগুলো কাধ পর্যন্ত নেমে আসছে দেখা যাচ্ছে।একটা হাত উঠানো যেখানে ঘড়ির দিকে অন্য হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘড়ি দেখানো হচ্ছে। ঐ টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল ফারিহা।বিরক্তির চরম সীমায় পৌছাল ফারিহা যখন দেখল যে ঘড়ি ডান হাতে পরা।“আপনিই তাহলে দেবদাস বাবু” সরাসরি মুখের উপর মৃদু হাসি দিয়ে অপমানটা মুখ বুঝে সহ্য করল। “বসুন!!! বসুন!!!! আপনি আসলেই তাহলে সাহসী” বলেই কুড়মুড় করে সমুচায় কামড় দিল সম্রাট। সব শুনে পিত্তি জলে গেল ফারিহার।
-     আশ্চর্য আপনি এইভাবে বিশ্রী ভাবে কুড়মুড় শব্দ করে সমুছা খাচ্ছেন কেন?
-     আরে বাহ। আপনার বুঝি করলা খুব প্রিয় তাই না।
-     এই কথার মানে কি?
-     তাহলে সবসময় এই রকম তিতা কথা বলেন কেন। এবার বাসায় গেলে ভাল করে মধু খাবেন। ঠিক আছে? বলেই হো হো করে হেসে উঠল সম্রাট।
-     না মানে আপনি একটু জানি কেমন করে শব্দ করে খাচ্ছেন। একটু লজ্জা পেল ফারিহা।আপনি এইভাবে আর শব্দ করবেন না সমুচা খাবার সময়। বিশ্রী শোনায়।
-     তাই নাকি।আবারো কুড়মুড় করে সমুচায় কামড় দিল সম্রাট। তা হলে এসেই পরলেন। আমি ভাবলাম আপনি আসবেন না।
-     আমি সবার মত না। এখন বলেন আপনার কাহিনী কি? আসে পাশে কিসের যেন গন্ধ পাচ্ছি? সুন্দর একটা গন্ধ।
-     আপনিকি আসলেই মেডিকেলে পরেন?
-     এই কথা কেন বলছেন?
-     না মানে গন্ধ আর ঘ্রানের পার্থক্য জানেনে না? গন্ধ মিনস্ সামথিং ব্যাড আর ঘ্রান মিনস্ সামথিং ওয়েল। সুন্দর গন্ধ না বলে সুগন্ধ বা ঘ্রান বলেন। হা হা হা। এটা আমার পারফিউমের ঘ্রান।
-     তাই ত।নিজের বোকামিতে নিজেই রেগে গেল ফারিহা। যাই হোক আপনি বলেন কি বলতে চান বলেন?কেন ডেকেছেন?
-     কিছুই না।
-     কিছুই না মানে?
-     না মানে আপনাকে বললাম যে আসতে।অনেক দিন সাহসী মেয়ে দেখি না তাই। অন্য কিছু না।
-     তার মানে আপনি কি আগেও সাহসী মেয়ে দেখেছেন?
-     হ্যা।আমার আম্মু।আমার আম্মুর মত সাহসী মহিলা আমি আমার জীবনে আগে দেখি নি। আপনি দ্বিতীয়।
-     কেন? আপনার আম্মু কি করেছিল?
-     আমার দাদাজানের বাসায় তল্পি তল্পা সহ চলে এসে বলেছিল আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করব,বিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে যাব না।হা হা হা। আর বলতে পারব না।আম্মু নিষেধ করেছে। হা হা হা।
-     থাক আর বলার দরকার নেই। আসলেই আপনার আম্মু অনেক সাহসী।
ফারিহা খেয়াল করল ছেলেটার মধ্যে কিছু অন্যরকম আছে যা একটু কেমন যেন। দেখতে উজ্জ্বল শ্যামলা। মুখটা সবসময় হাসি হাসিকাধ পর্যন্ত ছুল,মুখ ভর্তি দাঁড়ি, বড় বড় চোখ।সবই স্বাভাবিক কিন্তু অস্বাভাবিক যেটা হল ডান হাতে ঘড়ি।
সম্রাট দেখল মেয়েটা খুব ফর্সা। কাজল দেয়াতে চোখ টা খুবই সুন্দর লাগছে। লাল শাড়িতে একটা তাজা গোলাপ মনে হচ্ছে ফারিহাকে।কিন্তু তার কথা গুলো দিয়ে ফারিহার মন খারাপ করে দেয়ার জন্য মনে মনে একটু আফসোস করল।
-আপনি কি কিছু খাবেন?
-নাহ।আপনি খান না...খান সমুচা খান। কুড়মুড় করে সমুচা খান।আমি যাই আমার কালকে এক্সাম আছে।
- আপনি কি আমাকে বোকা ভাবেন নাকি? আমি খারাপ হতে পারি তবে বোকা নই। হা হা হা। মেডিকেলে কোনদিন পরপর এক্সাম নাই।
-আমি খারাপ স্টুডেন্ট।আমার সাপলি আছে।
- সরি। আমি ফাইনাল ইয়ার এ পড়ি। প্রফের সময় কোন  সাপলি পরীক্ষা হয় না। আপনি আমাকে বাহানা দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছেন মনে হয়।যাক আমার পরিচয়তা দেই। আমার নাম......
-জানি। বলতে হবে না। তা ভাইয়া আমাকে আপনার দেখা শেষ হলে আমি কি যেতে পারি?
-আপনি মনে কিছু নিবেন না। আমি আসলে পরীক্ষার টেনশনে আছি। দেবদাস ছবিতে দেখেছিলাম যে দেবদাস টেনশনে থাকেলে চন্দ্রমুখী গ্লাসে করে মদ ঢেলে দিত। দেবদাস খেত আবার চন্দ্রমুখী বোতল নিয়ে যেত। তাই আমি এম্নেই এটা লিখেছিলাম।এখন আমি ত মদ খাই না।আর এই রকম চন্দ্রমুখী কই পাব তাই জাস্ট লিখেছিলাম।
- দুঃখিত ভাইয়া।আমি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। তবে এইভাবে লিখলে একটু ব্যাখা দিয়ে দিবেন দয়া করে। আর......
- আমার যেতে হবে। আমি যাই।হঠাৎ করেই উঠে চলে গেল সম্রাট।
সমুচার অবশেষ এর সাথে শূন্য টেবিলে অবাক বিস্ময়ে বসে রইল ফারিহা।



Comments

Popular posts from this blog

স্মৃতি

মনের আকাশে মেঘ

এত তিতা লাগে কেন?