ঘড়ি (প্রথম পর্ব )

©MIKParadox

১।


চেয়ারে বসে আছেন আম্বিয়া খাতুন।সিরিয়াল দিয়ে বসে আছেন আধা ঘণ্টা।সামনে থেকে একজন রিসিপসনিস্ট দাঁড়িয়ে বলল আন্টি আপনি এবার যান। দরজার ওপর নীল নেমপ্লেটে সাদা দিয়ে লিখা ডাঃ ফাহমিদা আক্তার(ফারিহা),মেডিসিন কন্সাল্ট্যান্ট। মহিলা ভালো করে পড়ে দেখল।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন। আসসালামুয়ালাইকুম আন্টি বসেন। বলল ফারিহা। হাল্কা কথা বার্তা বলে রোগীর সাথে সহজ হয়ে নিল। আন্টি এবার বলেন আপনার কি সমস্যা। আম্বিয়া খাতুন তার সমস্যার কথা বলা শুরু করল।
-দেখ তো মা হাতের আঙ্গুল গুলা ব্যাথা করে। কিছু ধরতে পারি না। আমার আবার বাতের ব্যাথা আছে।
- দেখি আপনার হাত।হাত দেখতে দেখতে বলল আপনার রিমটয়েড আথ্রাইটিস হয়েছে। সমস্যা নাই আন্টি।শুধু একটু ওষুধ নিয়মিত খাবেন। বাকিটা আল্লাহ্‌ ভালো করে দিবেন ইনশাআল্লাহ্‌।
মহিলা হাত সরিয়ে নেয়ার আগে হঠাৎ তার হাতের দিকে খেয়াল হলও ফারিহার। আন্টি কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?বল মা। তুমি তো ডাক্তার, তুমি জিজ্ঞেস করতেই পার। না মানে আন্টি আপনার ডান হাতের ঘড়িটা তো ছেলেদের তাছাড়া এই ঘড়িটা তো অনেক আগের এবং আমার পরিচিত লাগছে। ও আচ্ছা। শোনো মা এইটা তোমার আঙ্কেলের ঘড়ি। আমার ছেলেও তোমার মত মেডিকেলে পড়ত। ওকে এসএসসি পরীক্ষার সময় তোমার আঙ্কেল এই ঘড়িটা দেয়। ও ডান হাতে ঘড়ি পরত।কিন্তু ওর আর পাশ করে তোমার মত ডাক্তার হওয়া হলো না। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আম্বিয়া খাতুন।যাক এখন তাই ওর কথা ভেবে আমি এই ঘড়ি হাতে দেই। ঘড়ি দেখলেই ওর কথা মনে পড়ে। হাত দিয়ে চোখের কোণে আসা জল আড়াল করলেন। কি হয়েছিল তার ? কোন মেডিকেলে পড়াশোনা করেছে ? ফারিহা পাল্টা প্রশ্ন করল। কিছু না মা, কিছু না।ও খুব ভালো ছাত্র ছিল কিন্তু খুব জেদি ছিল। সারাক্ষন সবার উপকার করার চিন্তা করত।বলত আম্মু যার নিজের স্বপ্ন পুরন হয় না সে অন্যদের স্বপ্ন পুরন করে। হঠাৎ কি যে হল বুঝলাম না.........আচ্ছা মা আমি যাই আবার আসব।একনাগাড়ে বলে কথা শেষ না করেই উঠে দাঁড়ালেন আম্বিয়া খাতুন। সমস্যা নেই আন্টি এইযে আমার কার্ড রাখেন। যেকোন সমস্যায় ফোন দিবেন। কার্ড মহিলার দিকে বারিয়ে দিল ফারিহাতিনি কার্ড নিয়ে এক পলক দেখলেন আচ্ছা বলে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে আবার পিছনে ফিরে বলল। ও তোমাদের মেডিকেলেই পড়তনাম ছিল সম্রাট, অনেক ভালো ছাত্র ছিল......অনেক ভালো ছাত্র...বলেই ঝড়ের বেগে রুম হতে বেরিয়ে গেলেন আম্বিয়া খাতুন।
হঠাৎ করেই ফারিহার শিরদাঁড়া দিয়ে শীতল একটা স্রোত বয়ে গেল।কিছুক্ষণের জন্য কিছু বলতে পারলনা। চেয়ার থেকে উঠে থাই গ্লাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। নিজের অজান্তেই চোখে আসা পানি মুছে ফেলল। প্রকৃতি বড়ই কাকতালীয়। প্রকৃতির অতিপ্রাকৃত খেলায় অবাক হল ফারিহা।



ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেখে চোখ কপালে উঠল ফারিহার। কি পাগলের মত স্ট্যাটাস দিল ছেলেটা “লুকিং ফর চন্দ্রমুখী”সকাল সকাল মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেল ফারিহার। আজকাল ফেসবুকে কিযে শুরু করল লোকে। হঠাৎ করে ভাবল এই স্ট্যাটাস আমার নিউজ ফিডে আসল কিভাবে।দেখল যে তার এক ফ্রেন্ড এতে কমেন্ট করেছে। আইডি টা তে একটু ঢুকে দেখবে কিনা চিন্তা করল। সংকোচ লাগছে, ধুর কে দেখি। কেউ তো আর দেখছে না। ঢুকে দেখল যে টেন মিচ্যুয়াল ফ্রেন্ড।আরে এতো দেখি আমাদের মেডিকেলরই এক বড় ভাই। নাম সোহরাব নেওয়াজ (সম্রাট)। এই স্ট্যাটাস দেখে মেজাজ খারাপ করার জন্য কি শাস্তি দেয়া যায় তা চিন্তা করতে লাগলো। ভাবল দেই ভাই কে একটা ম্যাসেজ।লিখল “আপনারা দেবদাস হবেন পারুর জন্য আবার চন্দ্রমুখীও খুঁজবেন এটা কেমন কথা???? শুনুন মেয়েদেরকে এভাবে অবজ্ঞা করবেন না। মেয়েরা এতটা সস্তা না। আমার মন্তব্যে দয়া করে আহত হবেন না। আমি এই ভাবেই কথা বলি। হুম। ভাল থাকবেন আর এই রকম পোস্ট দিবেন না।” লেখার পর ভাবল এইটা লেখা কি ঠিক হচ্ছে। অপরিচিত একজনকে এই ভাবে কড়া ভাষায় ম্যাসেজ দেয়াটা ঠিক হচ্ছে না। ভাইয়ার প্রোফাইল দেখে চিনি কিন্তু কোনদিন সরাসরি দেখা হয় নাই। থাক যা ভা­­বে ভাবুক। মেজাজ খারপ হয়েছে এখন এটা দূর করতে হলে এটা ছাড়া উপায় নাই। সেন্ড বাটনে ক্লিক করে দিল ফারিহা।
সম্রাট তার ফেসবুকে একটা অপরিচিত আইডি থেকে ম্যাসেজ দেখতে পেল। নাম ফাহমিদা আক্তার(ফারিহা)।লেখাটা দেখে তার খুব অবাক লাগল।আরে কে এই মেয়ে। আইডি তে ক্লিক করে দেখল যে মেয়ের প্রোফাইল পুরাই ইনফরমেশন লেসযা জানতে পারল যে মেয়ে তার মেডিকেলেরই একজন এবং তার সাথে ফ্রেন্ডলিস্টের দশজনের ফ্রেন্ডশিপ আছে। হাসি পেল খুব সম্রাটের। এতে মেয়ের খারাপ লাগার কোন কারণ খুঁজে পেল না যে কড়া ভাষায় ম্যাসেজ দিল। সম্রাট জবাবে লিখল “আপনি খুব সাহসী মেয়ে মনে হচ্ছে।আসুন দেখি কাল তিনটায় বিকেলে ক্যান্টিনে। মুখে সবাই বলতে পারে। কারণটা নিজেই আমার মুখ থেকে শুনে নিন। আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকব” লিখা শেষ করেই হাসতে লাগলো সম্রাট।এবার নিশ্চয়ই মেয়েটা ভয় পেয়ে যাবে। ব্লকও মেরে দিতে পারে। যাক বাদ দেই বলে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিল সম্রাট।
ম্যাসেজের এই রকম রিপ্লাই পাবে কল্পনাই করেনি ফারিহা। ছোটকাল থেকেই খুব রাগী সে। বাবার আদরের মেয়ে। যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। সবসময় তার জিদের কাছে হার মেনেছে পরিবার। বন্ধু মহলেও সবাই একটু আলাদা রাখে তাকে। এই রিপ্লাই পেয়ে মেজাজ পুরাই খারাপ হয়ে গেল।ব্রেইন রিলাক্স করার দরকার ভাবল ফারিহা। ট্রাঙ্কুইলাইজার ৫ মিলিগ্রাম খেয়ে পড়তে বসল কাল বিকেলে দেখা করতে যাবে সে সম্রাটের সাথে।প্রমান করবে যে সে আর দশটা মেয়ের মত না। আরে!!!!!কালকে তো প্রফ পরীক্ষা। টেনশনে ঘুম আসছে না তার।আইটেম গুলা ভালই হয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় কার্ড গুলো হলেই বাঁচি।ভাবল ফারিহা।পড়ায় মনোযোগ দিল সে। আপাতত মাথা থেকে সম্রাটের চিন্তা বাদ দিল ফারিহা।


Comments

Popular posts from this blog

স্মৃতি

মনের আকাশে মেঘ

এত তিতা লাগে কেন?