ফাহাদ ও মৎসকুমারীর গল্প(পর্ব ১)

                                             
ফাহাদের ভালো লাগছে না। কক্সবাজারের পথে বাস ছুটে যাচ্ছে।ফাহাদ জানালার দিকের সিটে বসে আছে। হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে।
এইবারো রেজাল্ট ভালো হয় নি। বাসা থেকে ইচ্ছে মত বকে দিয়েছে আব্বু। আম্মু কিছুই বলে নি। আম্মুর মুখের সেই আগের হাসি এখনো আছে। তবে আম্মুর চেহারা দেখলে বোঝা যায় যে কোথাও কিছু একটা ঠিক নেই।
বাসা থেকে এবার রাগ করে হলে ফিরে এসেছিল। চুল বড় রেখেছে। বাহিরে ঘোরাঘুরি প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিল। ভার্সিটি থেকে ট্যুর দিল। ফাহাদ একটু হাফ ছেঁড়ে বাঁচল। কিন্তু এই শীতের মধ্যে এই ট্যুর ফাহাদের জন্য উল্টো বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। বাসে উঠার এক ঘণ্টা আগে থেকেই হাঁচি আর সর্দির প্রাদুর্ভাব।
কিন্তু বাসে উঠার পর হঠাৎ মাথা ঘুরতে লাগলো। পাশের সিটের বন্ধুকে অনুরোধ করে জানালার পাশে বসলো। আগের জানালার পাশে সিট পায়নি। বাসে বাকী ছেলে-মেয়েরা খুব হই হুল্লোড় করছে। কক্সবাজার ট্যুর বলে কথা!! কিন্তু ফাহাদের অসুস্থতা তাকে এই সুযোগ দিচ্ছে না। ঠাণ্ডা লাগা সত্ত্বেও জানালার পাশে বসেছে। আরো লাগলে লাগুক। এইবার সে ঠাণ্ডাকে আর থোরাই কেয়ার করে।
আব্বুর বকুনির কথা মনে পড়ে নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হল। মনে মনে ভাবলও এই জীবনের আর কোন মূল্য নেই। ভাবলো জানালা দিয়ে লাফ দিলে কেমন হবে? পরক্ষণেই আবিস্কার করলো এর থেকে ফালতু কোন কাজ আর হতে পারে না। ভাবলো তার থেকে ঠাণ্ডা লাগানোর বুদ্ধিটা কম খারাপ কি? নিজেকে নিজে কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে মনের জ্বালা একটু যদি কমে।
ফাহাদে তার মাথা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে আরেকটু বাড়িয়ে দিল। তার কোঁকড়া চুল বাতাসে উড়ছে।

                                         ।
বাস থামার পর সবাই হই-হুল্লোড় করে যে যার মতো করে নেমে গেলো। ফাহাদকে নিয়ে কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ খাদিজা তাকে ডাক দিল।
-     কিরে ফাহাদ শরীর খারাপ লাগছে?
-     নাহ। এম্নেই... এই তো নামছি। তুই নামলি দেরীতে যে?
-     আরে আর বলিস না। আমি তো রাতে দুই বার বমি করসি,পরে ঘুমিয়ে গেসিলাম। এইতো সবাই নামার আগে আমাকে ডাক দিল।ক্লান্ত থাকায় কেউ আর বেশি ডাকাডাকি করে নাই। পিছনে বসছিলাম তো তাই দেরীতে বের হলাম। দেখে নিলাম সব ঠিক আছে কিনা। তুইও দেখ সব ঠিক-ঠাক আছে কিনা।
-     ধন্যবাদ। মনে মনে বলল মেয়েটা অনেক বেশি কথা বলে। হাসি দিল একটা।
-     যাই রে সবাই চলে গেছে। তুইও আয়।
-     আচ্ছা।
ফাহাদ সিটের উপর ব্যাগ রাখার স্ট্যান্ড থেকে তার ব্যাগ নিয়ে নিল। মন খারাপের সাথে মেজাজ খারাপের পরিমাণ দ্বিগুণ হল যখন দেখল যে কার যেন পানির বোতল খুলে পানি পড়ে ফাহাদের ব্যাগের একপাশ পুরোটা ভিজে গেছে।
কি আর করার। ভাবলো আসলে তার ভাগ্যই খারাপ। আর কতটুকু ভিজেছে এইটা হাত দিয়ে দেখতে না দেখতেই এক বিরাট হাঁচি আসলো। সর্দিতে নিজের হাত আর মুখ মাখামাখি। বিশ্রী অবস্থা।
হঠাৎ উদয় হল খাদিজা। ফাহাদকে দেখেই হাসতে লাগলো জোরে জোরে।
-কিরে!!! তোর এই অবস্থা কেন?
-ফাহাদের বলার মত মেজাজ ও নাই। রাগে চুপ করে রইল।
- নে আমার কাছে টাওেল আছে। হাত মুছে নে। সমস্যা নাই, আমি নতুন কিনেছিলাম।দেখ এখনো প্যাকেট করাই আছে। পরে আমাকে একটা মনে করে কিনে দিস, তাইলেই হবে।
-ধন্যবাদ।ফাহাদের মন কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠলো। হঠাৎ করেই খাদিজার এই কেয়ারিং টার জন্য মনে মনে খুব খুশি হল। তা তুই আবার আসলি যে?
- দেখলাম তুই এখনো নামিস নাই। তাই আসলাম।
- যাক তুই আসায় ভালোই হল। নাইলে যে কিভাবে বের হতাম। আবারো ধন্যবাদ।
-ধন্যবাদে কাজ হবে না। পরে কিন্তু আমাকে টাওেল কিনে দিবি,ওকে? প্রমিস কর।
- আচ্ছা দিব। প্রমিস।
খাদিজা নেমে চলে গেল। ফাহাদের মন খারাপের মাঝেও একটা মুচকি হাসি দিল।

Comments

Popular posts from this blog

স্মৃতি

মনের আকাশে মেঘ

এত তিতা লাগে কেন?