লম্বা প্রলাপ

গল্প করতে ভালো লাগে তাই একটু গল্প করি। খেলা নিয়ে একটু গল্প করি।লম্বা গল্প।
পৃথিবীটা একটা রেসিং ট্র্যাক। প্রায় কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া প্রায় সবক্ষেত্রেই বলা যায়। তবে একেকজন মানুষের জন্য বা একটু স্পেসিফিকেল্লি বললে একেক টাইপের মানুষের জন্য একেক টাইপের। একই টাইপের মানুষ যারা তাদের ট্র্যাক একই রকম হবে। তাদের প্রতিযোগিতাও ঐ একই ট্র্যাকেই হবে।
মানুষের জীবনটা একজন খেলোয়াড়ের জীবনের মতই। তাকে খেলার জন্য প্রাকটিস করতে হয়। মাঠে নামতে হয়। জিততে হয়। নয়ত পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে হয়। আশেপাশের মানুষেরা খেলার মাঠের দর্শকের এবং নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আপনি ভালো খেলবেন তো দর্শক আপনাকে তালি দিবে, খারাপ খেললে গালি। কিছু সময় ভালো খেললে সামনের দিনগুলোতে দলের হয়ে খেলা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে,অন্যথায় একটু কষ্টকর। তবে ভাগ্যের সহায়তা থাকলে খারাপ খেলেও যথেষ্ট পরিমাণ সুযোগ পাওয়া যায় নিজেকে প্রমাণ করার।
কিছু খেলোয়াড় আছে যারা প্রতিভা নিয়ে আসে পৃথিবীতে। মানুষ বলে এই কথা, তাদের কথাই সই। তারা সব সময় ভালো সময়ের মধ্যে থাকে। খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে তাদের খুবই কম যেতে হয়। আরেক শ্রেণি আছে যারা অনেক কষ্ট করে তাদের প্রমাণ করে দলে সুযোগ পায়। প্রাণপণ চেষ্টা করে চলে নিজের ফর্ম ধরে রাখার। কিন্তু ফর্ম হারালেই শেষ। দল থেকে বাদ। আরেক শ্রেণি আছে যাদের সবসময়য় মাঝামাঝি দেখা যায়। খুব ভালোও খেলে না আবার খারাপও খেলে না ফলে দল থেকে বাদ পরে না।
দর্শক আর নির্বাচকেরা কেন জানি খেলোয়াড়ের পার্ফরম্যান্স এর চেয়ে দলের জয় কেই বড় করে দেখেন। আপনি  কম বল খেলে সেঞ্চুরি করলেন কিন্তু দল হারলে সবাই বাহিরে বাহিরে আপনাকে বাহাবা দিবে, দিনশেষে এই বৃথা সেঞ্চুরি নিয়ে সান্ত্বনা দিবে। কিন্তু পরাজিত দলের খেলোয়াড় হয়েই দিন কাটাতে হবে। মনে করুন আপনার দল জিতল। আপনি অনেক বল নষ্ট করে ৩০ প্লাস রান করেন,কোন ব্যাপার না। আপনার প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। আপনার এই বল খাওয়াটা কোন ব্যাপারই না।
তাহলে কি দাঁড়াল ব্যাপারটা? বল খাওয়ার বা বল না খাওয়ার ব্যাপারটা আসলে নির্ভর করে হার জিতের উপর। যদি আপনি কম বলে বেশি রান করে এসে হারুপার্টির মধ্যে পরে যান, আপনার দোষ আরেকটু দেখে শুনে খেললে ভালো হত। আপনি তাড়াহুড়া করে খেলেছেন। আর যদি বাই চান্স আপনি জয়ীপার্টি, তাহলে তো আপনি হিরো!
আবার যদি বেশি বল খেলে জিতে যান ব্যাপার না পোলাটা কষ্ট করে মাঠে পড়ে থাকছে। মান সন্মান বাঁচিয়েছে জয়ের মাধ্যমে। আর নাইলে হেরে গেলে বলবে অনেক বল নষ্ট করেছে। কম রাএ যদি বেশি বল খেয়ে থাকেন তবে তো আপনার ক্যরিয়ারই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে!
আগে ভালো খেলতেন এখন ভালো খেলেন না। এইটা কেউ মেনে নিতে চাইবে না। একটু সময় দিলে ভালো খেলে দেখাবেন সেই সুযোগও বারবার দিবে না। পৃথিবী এই রকমই। আপনি আগে যদি অনেক ভালোও খেলে থাকেন দিনের পর দিন,অই এক ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলে বাকি পৃথিবী আপনাকে গালি দিতে ভুলবে না।
যেকোন একটা খেলা শেখা অনেক সহজ কিন্তু সেই খেলাটা জেতা অনেক কষ্টকর। আর যখন খেলাটা পুরোপুরি আপনার আয়ত্তে চলে আসবে, হেসে খেলে জিততে পারবেন। কিন্তু আপনার মতই সম পর্যায়ের একজনের সাথে খেলতে গেলে হেরে যাবার আশঙ্কাও কিন্তু থাকবে। অর্থাৎ সর্বদা প্রস্তুতি নিয়ে খেলাটাই মঙ্গলজনক।
এই দীর্ঘজীবনে একসময় আসবে যখন আর খেলতে ইচ্ছে করবে না। তখন শুধু পৃথিবী নয়, আপনি নিজেও আপনাকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন। ধিক্কার দিবেন নিজের অক্ষমতাকে। আর যখন খেলাধুলা থেকে অবসর নিয়ে নিবেন, ঘটনা কিন্তু কিছুটা একই রকম। তবে পার্থক্য হচ্ছে এই যে, বয়সের জন্য বেঁচে যাবেন। বয়সের দোহাই দিয়ে সবাই মেনে নিবে।
শারীরিক অবসরে ক্ষমা পাওয়া যায়। মানসিক অবসরে তবে কি?
হা আপনার মনেরও অনেক সময় আর খেলাধুলা করতে ভালো লাগবে না। আপনি অনেক ভালো খেলতেন কিন্ত এখন কোন এক কারণে আপনার আর ভালো লাগে না। কিন্তু আপনি আপনার এতদিনের অর্জনের জন্য খেলাকে ছেড়ে দিতেও পারছেন না। চাচ্ছেন না খেলার ইতিহাস থেকে আপনি হারিয়ে যান। কিন্তু মনের অবসরে আপনার পারফরম্যান্সে তার প্রতিফলন ঘটবে। আপনি ফর্ম হারাবেন। আশা করবেন সম্মানজনক এক অবসরের। ভাগ্যের সহায় হলে পারবেন, অন্যথায় অপমানের গ্লানি নিয়েই বিদায় নিতে হবে।
আজকে যেই মানুষ আপনার সমালোচনা করছে একদিন তারাই আপনার জন্য হাতে তালি বাজাবে, যদি আপনি সেইরকম কিছু করে যান। পৃথিবীতে সময় কয়দিনের বলুন? আজকে মানুষ হাসছে? হাসতে দিন। কারণ আপনি/আমি হাসির কাজ করছি। আজকে তারা আমাকে নিয়ে হাসুক। আমিও হাসি।
তবে একটা কথা কি? মানুষের মুখেই জয়, মানুষের মুখেই ক্ষয়। কিন্তু নিজের কাছে নিজের সততা অনেক বড় একটা ব্যাপার। যতদিন হাত-পা-মস্তিষ্ক ঠিক আছে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ। মানুষের কথায় নয়, নিজের কিছু কথা মানুষের জন্য রেখে যাবার চেষ্টা করুন। আপনার নিজের উদ্ভাবিত কিছু চারা গাছ, কিছু বীজ রেখে যান অন্যের মাধ্যমে। আপনি হারবেন হয় আপাতঃ দৃষ্টিতে। দিনশেষে আশাবাদী যে আপনিই জিতবেন। কেউ বলুক বা না বলুক। আপনার নিজের কাছে অন্তত হারবেন না।
স্বপ্ন দেখা সহজ কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন,আবার অনেক সহজ। ভাগ্যে যেইভাবে আছে সেই অনুসারে কঠিন বা সহজ হবে। তবে খুব সহজ না সেটা মনে রাখতে হবে। সহজ হলে সেটা কি আর স্বপ্ন হয়!
অনেক প্রলাপ বকলাম। থামা মনে হয় জরুরী। নাকি?

#MIKParadox 

Comments

Popular posts from this blog

স্মৃতি

মনের আকাশে মেঘ

এত তিতা লাগে কেন?