বেবী-আগুন আর মা-আগুন

বেবী-আগুন আর মা-আগুন এর মধ্যে কথোপকথনঃ

:- আচ্ছা মা আমি আগুন কেন?

:- আমাদেরকে সৃষ্টিকর্তা আগুন হিসেবে বানিয়েছেন। তোমার বোন, বাবা, ভাই তারাও তো আগুন।

:- আমাকে এতো গরম করে বানিয়েছেন কেন? আমাকে দিয়ে সবার অনেক ক্ষতি হয়। তারপরও আমাকে কেন সৃষ্টিকর্তা আগুন হিসেবে বানিয়েছেন?

:- না বেবী, রাগ করো না। কই এই যে দেখো তোমার বোনকে, তাকে দিয়ে চুলায় রান্না করা হয়। তোমার বাবাকেই বা দেখো, সূর্যের গায়ে থেকে থেকে সবাইকে আলো দিয়ে বেড়াচ্ছে। আর বাবাকে বেঁচে থাকতে হলে তো একটু শ্বাস নিতেই হবে, তাই না বেবী. তাই একটু আধটু গরম তো লাগবেই।

:- কিন্তু তারপরও মানুষ আমাকে ভালোবাসে না। সবাই দূরে থাকে কেন? এই যে ম্যাচ এর কাঠি বা গ্যাস-লাইটার জ্বালানোর পর আমি সবাইকে দেখতে না দেখতে আবার আমাকে নিভিয়ে ফেলে। আমি কখনোই পুরোটা সময় থাকি না।

:- আরে এই যে তোমার ভাইকে দেখো। সে মোমবাতিতে থাকে। শীতকালে সবাই আমাদের কাছে আসে। আমাদের থেকে আলো পায়, তাদের শরীরটা গরম করে। আর কারেন্ট চলে গেলে যখন টর্চ/মোবাইল না পায় তখন তো ম্যাচ এর কাঠিতে/লাইটারে তোমাকে খুঁজে নেয় বেবী।

:- কিন্তু আমি যে স্পষ্ট শুনলাম। বাসার বাচ্চাটা আমাকে ম্যাচ দিয়ে জ্বালিয়েছে বলে ওর আম্মু ওকে অনেক মেরেছে। আর বলেছে আমার থেকে দূরে থাকতে। আমাকে নিয়ে নাকি খেলা ঠিক না। আমি নাকি বিপদজনক। আমার আশেপাশে থাকাও নাকি ক্ষতিকর।

:- হ্যাঁ বেবী। তুমি তো অনেক ছোট। কিন্তু তুমি যখন রেগে যাও, তখন তোমার অনেক ক্ষমতা। তোমার তাপে পুড়ে যায় সবকিছু। তুমি তো নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারো না। সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে চাও। তোমার আবদার পূরণ করতে পানি,বালি কত কি লাগে। তারপর তুমি ঠাণ্ডা হও। তোমার আবদার আর সবার কাছে যাওয়াটা জীব জাতির জন্য ক্ষতিকর বেবী। তুমি তাদের জন্য বিপদজনক।

:- বাবা রেগে গেলে বনে আগুন জ্বলে, ভাইয়া রেগে গেলে বাহিরে, আপু রেগে গেলে বাসায়। আর আমি রেগে গেলে সবাই পুড়ে। আচ্ছা মা তুমি রাগো না?

:- বেবী, আমি তো পৃথিবীর ভিতরে রে। আমার থেকেই তো সব তোরা ভাই বোন। তোর বাবা, আমি আমাদের উপাদান থেকেই তো প্রাকৃতিক গ্যাস, দাহ্য পদার্থ এই সব। আমি রেগে গেলে তো সবাই শেষ হয়ে যাবে। তাও তো মাঝে মাঝেই তোদের সাথে রাগ হই। লাভা হয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে আসি। আমি তো একক না। আমি তো পুরোটা। তোরা ভাই বোন তোর বাবা, আমি আমরা সবাই রাগলে বরং জীব জাতির ক্ষতিই হয় বেশি।

:- আমাকে কেউ ভালোবাসে না মা, আমাকে কেউ পছন্দ করে না মা। আমি কি শুধু এই পোড়ানোর জন্যই এইখানে মা, আমার কি শুধু কি পোড়া ছাই এর সাথেই রয়ে যাবো?

:- না বেবী। সবাই তোমাকে ততক্ষণ ই পছন্দ করে যতক্ষন তুমি নির্দিষ্ট দূরত্বে নিয়ন্ত্রনের মধ্যে থাকো। ম্যাচের কাঠিতে,লাইটারে তুমি তাদের সাথে থাকবে। তারা তোমাকে খুঁজে নিবো। আরেকটু বড় হলে তোমার থেকে আলো পাবার জন্য তোমাকে তোমার ভাইয়ের মত মোমবাতিতে রাখবে। তাই খুব বেশি আবদার করো না বেবী। নাইলে সামনের সবাই পুড়ে যাবে। রয়ে যাবে শুধু ছাই। অন্ধকারে তুমি তাদের একমাত্র ভরশা। তখন তাপে না, আলোতে তোমাকে সবাই খুঁজে নেয়।

:- তাহলে কি করবো মা?

:- তোমাকে সবার কাছে থাকার জন্য বানানো হয় নি। গ্রীষ্মে সবাই একটু বকা দিলেও, বাকীটা সময় সবাই তোকে ভালোবাসবে। শীতকালে তোর খুবই কদর হবে বেবী। সবাই তোমাকে তাদের মত করে বের করে নিবে। তারা তোমার থেকে নির্দিষ্ট নিরাপদ দূরত্বে থেকেই তোমাকে পছন্দ করবে। তুমি শুধু আবদার করে এর বেশি কাছে নিয়ো না তোমার আশেপাশের সবকিছুকে। আমরা আগুন। শুধুমাত্র আমরাই আমাদের কাছে আসতে পারি। আগুনে আগুনেই পরিবার বেবী। অনেক হয়েছে এইবার নিভে যাও। দেখি তোমাকে আবার কেউ জ্বালায় কিনা। আমি অপেক্ষায় থাকলাম। আবার দেখা হবে বেবী।

বেবী আগুন নিভে গেল। মা আগুন জ্বলতে থাকলো। কখনো গ্যাস ফিল্ডে, কখনো আগ্নেয়গিরির লাভাতে। কখনো অন্য কোন আগুনে।

Comments

Popular posts from this blog

স্মৃতি

মনের আকাশে মেঘ

এত তিতা লাগে কেন?